কুয়েটে গেছেন কখনো? যশোর থেকে খুলনার পথে, শহরে ঢোকার ঠিক আগেই.

আমি পোটলা পাটলি নিয়ে পড়তে গেলাম ১৯৯৯ সালে. একদম শেষ হলটায় জায়গা মিললো. 'লালন শাহ হল'. টেবিল টেনিস খেলার রুমে চল্লিশ জনকে একরুমে থাকতে দেয়া হয়েছে. রুমটার ঠিক মাঝখান বরাবর একটা টেবিল টেনিস টেবিল, তার চারদিক ঘিরে ছোট ছোট চকি, কেউ মেঝেতে তোষক পেতে ঘুমাই.


একটা কথা শিখলাম. 'ফ্রিকোয়েন্সি'.

একেকজন একেক রকম পরিবার থেকে এসেছি, কেউ বিরাট বড়লোকের ছেলে, আমরা কেউ কেউ সাধারণ পরিবারের. কেউ কেউ সবার সাথে মিশে যেতে পারছে না. আসলেও অসুবিধা হচ্ছিলো. কেউ লাইট জ্বালায় ঘুমায় কেউ নিয়িয়ে. কেউ মেটালিকা শুনে, কেউ 'জলে ভাসা পদ্ম আমি, শুধুই পেলাম ছলনা, ও আমার সহেলী, আমার নাই কি কোথাও কোনো ঠাই?' শুনে ছল ছল চোখে চিঠি লিখে.

আমার কিন্তু বেশ লাগতো. একরুমে চল্লিশজন থাকি. সকাল সন্ধ্যা আড্ডা.

তখন উঠতি বয়স, প্রেম মনে, কামনা দেহে. ড্যাসিং বন্ধুরা গাড়িতে ডেটিংয়ের গল্প বলে. কোন বিল্ডিঙের লিফ্ট একটানে ষোলো তালা উঠে, স্পাইস এন্ড আইসের বেয়ারা কে কুড়ি টাকা এডভান্স বকশিস দিলে একঘন্টা পর মেনু নিয়ে আসবে. আমি শুনি আর ভাবি, 'ইশ্বর, পৃথিবী মোহময়.'

একবার এক বন্ধু পাট খেতে ডেটিংয়ের গল্প বলেছিলো. খোলা আকাশের নীচে, ডুরে শাড়ি কেশবতী. আলতা পড়া পা. বাতাসে পাতার সর সর শব্দের মাঝে অস্ফুট বলে ওঠা, 'ভালোবাসি'. উফ আজও পাটক্ষেত দেখলে আমায় ব্যক্তিত্বে দৃঢ়তা অনুভব করি.


আমি যৌথ পরিবারের বড় ছেলে. যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠার সব চাইতে বড় সমস্যা হলো, আপনার শুধু বাবা মা আর ভাইটার জন্য খারাপ লাগবে না. চৈদ্দ গুষ্টির জন্য মায়া লাগবে.

কুয়েটে প্রথম মাস খানেক খুব ভালো ছিলাম. এরপর বাসার জন্য খারাপ লাগা শুরু হলো. আমার দম বন্ধ হয়ে আসে. কিচ্ছু ভালো লাগে না. খানা গলা দিয়ে নাম না. এর মধ্যে আমার জন্মদিন. আম্মা ফোন করে টানা সাত মিনিট ফুঁপিয়ে গেলেন. আমি শুধু একটা শব্দ শুনেছি, 'আমার টুনি.'


সন্ধ্যায় সবাই দল বেঁধে বিকেলের নাস্তা খেতে যেতাম. আমি রুমে একা একা গান শুনছিলাম. কাউকে বলি নাই আমার জন্মদিন. এশার নামাজের আগে আগে দেখি, পোলাপান রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে. আমি সারাটা জীবন না বুঝে ঘাপলা করে এসেছি. আমি নিশ্চিত আজ একটা ভীম মাইর খাবো. ভয়ে ভয়ে জানতে চাই, 'আমি কি করছি?'

কে যেন বললো, গেস্ট রুমে আয়. গেস্ট রুমে ডাক পড়া মানে, তুমি কোনো বিশাল লজ্জার কাজ করে আসছো. সাধারণ সভায় শাস্তি হবে.

ভয়ে ভয়ে গেলাম গেলাম. গিয়ে দেখি কেক নিয়ে বসে আছে সবাই. এবং রুমে ঢোকা মাত্র প্যান্ট খুলে দেয়া হলো. মেয়েদের হল থেকেও বান্ধবীরা উপহার পাঠিয়েছে. আমি চোখের পানি আটকায় রাখতে পারি নাই. কেক কাটলাম. হুলুস্থূল উল্লাস.

আমার জীবনে এর চেয়ে বিশাল উপহার আমি কোনোদিন পাই নাই.


বন্ধুদের জন্য আমি কখনোই কিছু করি নাই. অকারণে বন্ধুরা আদর করে রেখেছে, অকারণ আহ্লাদ. আমি deserve করি না. অপাত্রে ভালোবাসা.


আমার একটা বন্ধু ভালোবাসা deserve করে. ওর একটা 'x factor' আছে. ও out of no where একটা platform বানাতে পারে. Concept খেলে ওর মাথায়. That matters.


যে কাউকে নিমিষে আপন করে নিতে পারে. তবে এইটাও ঠিক, মুহূর্তে গাইল্লায়া ভুত বানায়ও দিতে পারে. একবার ঘন্টা খানেক গালি খেয়ে একজন জানতে চাইলো, আমি কি করছি? আমি তো দেশেই ছিলাম না. কাইল আইছি.

সে বিরক্ত মুখে বলে, 'কাইল আইসোস? হাছা তো? তাইলে ঠিক আছে.'

আড্ডায় যে খুব লাফালাফি করে তা কিন্তু না, তবু ও না থাকলে আড্ডা নিরামিষ লাগে.


গতকাল তার মনে হয়েছে, সে যদি রনির আগে মারা যায়. রনি তার কবর ফুটা করে লাঠি দিয়ে খুচাবে. বুঝ অবস্থা.


কার কথা বললাম? বল তো?


শুভ জন্মদিন Hasan Mahmud, Prince of NDC 98
কুয়েটে গেছেন কখনো? যশোর থেকে খুলনার পথে, শহরে ঢোকার ঠিক আগেই. কুয়েটে গেছেন কখনো?  যশোর থেকে খুলনার পথে, শহরে ঢোকার ঠিক আগেই. Reviewed by poland Trending now Trends on 9:37 PM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.